প্রকাশিত: Wed, Dec 7, 2022 9:17 PM
আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:42 AM

বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স এবং সেশন চেয়ার

মোহাম্মদ বাছিত: বাংলাদেশের মতো একটি দেশ থেকে মানসম্মত একটি বৈজ্ঞানিক কনফারেন্স আয়োজন করা খুব সহজ কোনো বিষয় নয়। তথাপি কিছু মানুষ নিরলস পরিশ্রম করে একেকটি বৈজ্ঞানিক কনফারেন্সের আয়োজন করে থাকেন। উক্ত কনফারেন্সে অভিজ্ঞ এবং নবীন গবেষকেরা একত্রিত হন, পারস্পরিক জানাশোনা হয়, জ্ঞানের আদান- প্রদান হয়, ক্ষেত্র বিশেষ নীতিনির্ধারকেরা, ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা অংশ নেন, দিন শেষে অংশগ্রহণকারীরা নিঃসন্দেহে উপকৃত হন। যারা তাঁদের সময় এবং মেধা ব্যয় করে কনফারেন্স আয়োজন করেন তাদের আমাদের পক্ষ থেকে অবশ্যই ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। কোনো সিন্ডিকেটের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও অনেক কনফারেন্স থেকে আমাকে কীনোট কিংবা ইনভাইটেড স্পিচ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশেষ কোনো অসুবিধে না থাকলে কখনোই না বলি না, এটিকে নিজের দায়িত্ব মনে করি। কনফারেন্সে আমাকে যে সেশনে বর্ক্তৃতা করতে আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই সেশনের ওডিয়েন্স কারা তা বুঝার চেষ্টা করি, আমার জন্য বরাদ্দকৃত সময় হিসেব করেই স্লাইড তৈরি করি, সেই মোতাবেক প্রস্ততি নিয়েই কনফারেন্সে যোগদান করি। কখনোই কোনো কনাফারেন্সে বক্তৃতা করার সময় আমার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের বেশি ব্যবহার করি না, ২/১ মিনিট পূর্বেই শেষ করতে চেষ্টা করি। বক্তৃতা শেষে আলোচনার জন্য ৫/১০ মিনিটের একটি সময় বরাদ্দ থাকে। এই আলোচনা আমি খুব উপভোগ করি এবং এই আলোচনাকে প্রাণবন্ত এবং অর্থবহ করার জন্য সবচেয়ে ভালো ভূমিকা পালন করে থাকেন সম্মানিত সেশন চেয়ার। যিনি স্বভাবতই ওই ক্ষেত্রের একজন বিশেষজ্ঞ গবেষক হয়ে থাকেন। একটি সেশন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সেশন চেয়ারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুব সৌভাগ্যবান এজন্য যে প্রায়ই সেশন চেয়ার হিসেবে পেয়ে যাই আমাদের কোনো অভিজ্ঞ গবেষক যিনি পুরো সেশনটি খুব দায়িত্ব নিয়ে পরিচালনা করেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু সেশনে দেখি এমন কাউকে সেশন চেয়ার করা হয়েছে, যার বিষয় সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই, মোটাদাগে হলেও তাঁর কোনো একাডেমিক এক্সসিলেন্স নেই। সর্বোপরি, তিনি হয়তো জীবনে কখনো ভালো কোনো কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেননি, কিন্তু বর্তমানে অনেক বড় কোনো পদে আসীন।  আমাদের দেশের মানুষের সময় জ্ঞান খুব কম। বিশেষ করে কিছু মানুষ একবার বলতে শুরু করলে থামতে চান না, সেশন চেয়ার কঠোর না হলে এবং ওই রকম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন না হলে তাদের থামানো সম্ভব হয় না, তাঁরা অনেক বেশি সময় নষ্ট করে ফেলেন। আমাদের ছাত্ররা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে কিন্তু তারা তাদের জন্য নির্ধারিত সময় অনেক ক্ষেত্রে পায় না এবং একধরনের মনোঃকষ্ট নিয়ে কনফারেন্স ত্যাগ করে। সময়ের ব্যাপারে সেশন চেয়ার সচেষ্ট থাকবেন, কঠোরতা অবলম্বন করবেন এটাই প্রত্যাশিত। তবে খুব বিশেষ ক্ষেত্রে সেশন চেয়ার ব্যতিক্রম ঘটাতে পারেন। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনার অবতারণা করতে চাই। 

১৯৮৮ সালে আলবার্ট  ফার্ট জায়ান্ট ম্যাগনোটোরেজিস্ট্যান্স বিষয়ে একটি কনফারেন্সে তার গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করছিলেন, উক্ত গবেষণার জন্য ২০০৭ সালে তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে উপস্থাপনাটি সম্পূর্ণ করতে পারবেন কি না এই নিয়ে ফার্ট খুব চিন্তিত ছিলেন। সেশন চেয়ার ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ব্রেট হেনরিচ (ফেলো, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি)। ফার্ট  জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্রেট, কতটুকু সময় বাকি আছে?’ গবেষণার গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রেট বলেছিলেন, ‘যতোক্ষণ দরকার ততোক্ষণ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পার’। নির্দিষ্ট সময়ে সেশন শেষ করা যেমন একজন সেশন চেয়ারের দায়িত্ব, ঠিক তেমনি যুগান্তকারী আবিষ্কারের গুরুত্ব অনুধাবন করে যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখানোও তার নিকট প্রত্যাশিত। আবারও বলছি, ভালো মানের কনফারেন্সে সেশন চেয়ারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কিছু কিছু কনফারেন্সে লক্ষ্য করেছি যে, সেশন চেয়ারের দায়িত্ব আয়োজকরা ভাগাভাগি করে নেন, নতুবা নিজেদের একান্ত লোকদের উপর দায়িত্ব আরোপ করে দেন। এক্ষেত্রে কনফারেন্স অর্থবহ হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, এ তামাশা বন্ধ করা অপরিহার্য। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ গবেষক কনফারেন্সের সেশন চেয়ার হবেন আয়োজকদের কাছে এই প্রত্যাশা। ফেসবুক থেকে